গণমাধ্যম ডেস্ক: এক বছর আগে ‘রোডম্যাপ’ ঘোষণা করে ঢাকঢোল পিটিয়ে আইন সংস্কারের কাজ হাতে নিলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কাজটি থমকে গেছে।
তবে আইন সংস্কার সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলছেন, আইন পরামর্শক কাজটি গুছিয়ে রাখছেন। সম্ভব হলে তা নিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রচেষ্টা নেবে কমিশন।
আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গেল বছর জুলাইয়ে ইসি ঘোষিত রোডম্যাপে আরপিও, সীমানা পুননির্ধারণসহ আইনী সংস্কারের কথা জানিয়েছিল কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ করা হয়।
বিশেষ করে নির্বাচনী আইন ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও ১৯৭৬ সালের সীমানা পুননির্ধারণ অধ্যাদেশের যুগোপযোগী সংস্কারের কথা বলেছে ইসি। এ দুটি বিষয়ে আইন পরামর্শকও নিয়োগ করা হয়।
সংলাপ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সংলাপে যেসব প্রস্তাব এসেছে তা বই আকারে প্রকাশ করে রাজনৈতিক দল ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোয় পাঠানো হবে। ইসির পক্ষে যেগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব সেগুলো করা হবে। আইন সংশোধনের বিষয়গুলো সংসদে পাঠানো হবে। আর যেসব প্রস্তাব বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের বিষয় রয়েছে সেগুলো সরকারের ব্যাপার।
গত মার্চ মাসে সংলাপ থেকে পাওয়া সুপারিশগুলোর পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত আইন করতে না পারায় সীমানা পুননির্ধারণও হয়ে গেল বিদ্যমান অধ্যাদেশ দিয়ে। এখন পর্যন্ত আরপিও সংস্কারের খসড়া রূপরেখাও তৈরি করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কমিশনের যেসব সংস্কার প্রস্তাব রয়েছে; বিশেষ করে আরপিও সংস্কার প্রস্তাব, তাও আর আমলে নেওয়া হচ্ছে না বলে জানান ইসি সচিব।
হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, “সংসদ নির্বাচনের আগে আরপিওর কোনো সংশোধনও করা হবে না। যথেষ্ট সময় না থাকায় এ নিয়ে আর কোনো চিন্তাভাবনা নেই।”
১৯৭২ সালে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ প্রণয়নের পর এ পর্যন্ত ১১ বার সংশোধনী এসেছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন অনুচ্ছেদে অন্তত ২০৯টি বিষয়ে সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে।
২০০৭ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে এটিএম শামসুল হুদার ইসি সংলাপ করে ব্যাপক আইনী সংস্কার করে।
সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (অধ্যাদেশ) (সংশোধন) আইন ২০১৩ বিল পাস হয়। এতে ব্যয়সীমা ২৫ লাখ টাকা করা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিতদের ভোটে অযোগ্য ঘোষণা করাসহ কিছু সংশোধন এসেছিল।
এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ইলেট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম), অনলাইন মনোনয়নপত্র জমা, জামানত বাড়ানো, স্বতন্ত্র প্রার্থিতা সহজীকরণসহ অন্তত ৩৫টি প্রস্তাব নিয়ে বসেছিল ইসির আইন সংস্কার কমিটি।
এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, “আমরা তো কাজ করে যাচ্ছি; কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। আইন পরামর্শকও এ কাজ করছে। ইভিএমের বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করাসহ কিছু বিষয় রয়েছে।”
সংসদ নির্বাচনের আগে সম্ভব হলে প্রয়োজনীয় সুপারিশ নিয়ে কমিশন আলোচনা করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কবিতা খানম বলেন, “সীমানা পুননির্ধারণ আইন করা সম্ভব না হলেও আগামীর জন্যে প্রস্তুত করে রাখা যাবে। আরপিও নিয়ে এখনও সময় রয়েছে; দেখা যাক কী হয়। সংস্কার না হওয়ারও কোনো কারণ দেখছি না।”
বুধবার ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান জানান, সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনার সময় শুরু হবে আড়াই মাস পর। এখন প্রস্তুতির কাজ চলছে। আইন সংস্কার আর হচ্ছে না। তবে আরপিও বাংলা অনুবাদের জন্য পরামর্শক কাজ করছে।
-বিডিনিউজ