নির্বাচনী প্রচারের শুরুতে সহিংসতায় প্রাণহানিতে ‘ব্যথিত-বিব্রত’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাকে ‘অসহায়’ মনে করছে বিএনপি।
বুধবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিইসির সঙ্গে দেখা করার পর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, সারা দেশে তাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হচ্ছে। পুলিশ এসব হামলা ঠেকানো বা সে সব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে উল্টো তাদের গ্রেপ্তার-হয়রানি করছে।
এসব বিষয় প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জানালে তিনি সুনির্দিষ্টভাবে আশ্বাস দিতে পারেননি জানিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, “আমরা মনে করি, তিনি অসহায়। তিনি বিব্রত বোধ করছেন, কারণ তিনি কিছু করতে পারছেন না।”
আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোট সামনে রেখে সোমবার প্রতীক বরাদ্দের পরদিনই ডজনখানেক জেলায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে মারামারি-ভাংচুরের ঘটনা ঘটে; নোয়াখালী ও ফরিদপুরে নির্বাচনী সহিংসতায় ক্ষমতাসীন দলের দুজন নিহত হন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বেশ কয়েকজন প্রার্থীর গাড়িবহরে হামলা হয়েছে।
সহিংসতায় প্রাণহানিতে দুঃখ প্রকাশ করে সিইসি হুদা বলেছেন, এ ঘটনায় তারা ‘ব্যথা’ পেয়েছেন, ‘বিব্রত’ হয়েছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ে মির্জা ফখরুলের গাড়িবহরে হামলা ‘অনাকঙ্খিত’ এবং তা কাম্য হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ে তার ওই প্রতিক্রিয়া আসার পর সেলিমা রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেন।
বৈঠক শেষে সেলিমা রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “তফসিল ঘোষণার পর থেকে আর কোনো নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হবে না বলে জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তারপরও আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অজ্ঞাতনামা মামলার নামে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
“এ বিষয়ে আমরা সিইসিকে জানালে তিনি জানান, পুলিশের সাথে এ বিষয়ে তারা কথা বলেছেন। পুলিশ বলেছে, তাদের নামে মামলা আছে। কমিশন এ বিষয়ে চেষ্টা করছেন এবং করবেন বলে জানান তিনি।”তবে সিইসির কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের আশ্বাস না মেলায় নির্বাচনে নিজেদের এজেন্ট খুঁজে পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, “সন্ত্রাসী এবং আওয়ামী লীগ পুলিশের সহায়তায় এ কাজগুলো (হামলা-ভাংচুর) করছে। পুলিশ তো আমাদের সহায়তা করছেই না বরং বিভিন্ন জায়গায় আমাদের নেতাকর্মীদের ব্লক রেড দিচ্ছে। হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এমনকি জামিনে যারা আছেন, তাদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না।
“এসব ঘটনা ঘটিয়ে তারা চাচ্ছে, আমরা যেন নির্বাচন করতে না পারি, একতরফাভাবে তারা যেন নির্বাচনটা উঠিয়ে নিতে পারে।”
পুলিশের ভয়ে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী পলাতক জানিয়ে সেলিমা রহমান বলেন, “কমিশন বলেছিল, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দেবে, যাতে সব রাজনৈতিক দল সমান সুযোগ পাবে এবং নির্বাচনী প্রচারের সুযোগ পাবে। আমাদের বিভিন্ন নেতাকর্মীরা পলাতক। আমরা বলতে পারছি না যে, কোন কোন জায়গায় আমরা এজেন্ট খুঁজে পাব। কেননা পুলিশের ভয়ে তারা পলাতক।”
নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, “যারা সহিংসতা করেছে, তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছি আমরা, আমাদের নেতাকর্মীদের হয়রানি, হামলা, গ্রেপ্তার না করার জন্য ব্যবস্থা নিতে বলেছি।
“আমরাও কমিশনকে সহযোগিতা করেতে চাই একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। এ কারণেই এখানে বার বার আসি।”
প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চিকিৎসকদের নেতা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি রায়।