গণমাধ্যম ডেস্ক : ঢাকা থেকেই রিকশাচালক গোলাম মোস্তফা স্ত্রীকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘তোমার জন্য শাড়ি আর মেয়ের জন্য থ্রি-পিচ কিনেছি। সকালেই দেখা হবে।’ তাঁদের ফোনালাপ হয়েছিল গত বুধবার বিকেলে। এখনো স্বামীর খোঁজ পাননি সাবিনা খাতুন। তাঁর সন্ধানে সম্ভাব্য সব রেলস্টেশন ও জিআরপি থানায় বার্তা পাঠানো হয়।
বুধবার রাতে মোস্তফার সঙ্গে এলাকার আরও দুই রিকশাচালক ছিলেন। ঈদ উপলক্ষে তিনজন ঢাকা থেকে একসঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন। তাঁদের মধ্যে শুধু মাহাবুব (৩২) গতকাল শুক্রবার ফিরে আসেন। তিনি বলছেন, তাঁরা লালমনিরহাট এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠেছিলেন। রাত সাড়ে ১০টায় ট্রেন ছাড়ে। কমলাপুরে স্টেশনে তাঁরা ট্রেনে ভেতরেই উঠেছিলেন। জয়দেবপুর এসে ছাদে ওঠেন। টাঙ্গাইল স্টেশনে ঝালমুড়ি কিনে খেয়েছিলেন। তারপর ঘুমিয়ে পড়েন। আর কিছু মনে নেই।
এই তিন রিকশাচালকের অপরজন হলেন জহুরুল ইসলাম (৩৪)। মোস্তফা ও মাহবুবের বাড়ি বাঘা উপজেলার পীরগাছা গ্রামে। আর জহুরুলের বাড়ি একই উপজেলার মাঝপাড়া গ্রামে।
মাহাবুব জানান, টাঙ্গাইলের কাছাকাছি এসে এক ঝালমুড়িওয়ালার কাছে থেকে তাঁরা ঝালমুড়ি কিনে খান। তারপর ঘুম ঘুম ভাব লাগে। এরপর আর কী হয়েছে, মনে করতে পারেন না। তাঁদের নাটোরের আজিমনগর স্টেশনে নামার কথা ছিল। পরের দিন গত বৃহস্পতিবার যখন চেতনা ফেরে, তখন তিনি সান্তাহার স্টেশনে। আজিমনগর থেকে ১০টি স্টেশন ছেড়ে গেছেন। মোস্তফা ও জহুরুলকে আর পাননি। তাঁর সঙ্গে থাকা ব্যাগ ও ছয় হাজার টাকাও পাননি। সেখান থেকে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় তিনি ফিরতি ট্রেনে আব্দুলপুর স্টেশনে এসে বাড়ি ফেরেন।
গতকাল বিকেলে জহুরুলের স্ত্রী রত্না বেগম জানান, বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে তাঁর কাছে ফোন আসে। ফোনে গাইবান্ধার ব্রাহ্মণডাঙ্গা স্টেশনের পাশে দোকানদার আশিক খান জহুরুল ইসলামকে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়ার কথা জানান। প্রাথমিকভাবে তাঁর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি লোক পাঠিয়ে জহুরুলকে নিয়ে আসার কথা বলেন। কিন্তু রত্না বেগম সেখানে পাঠানোর মতো কাউকে পাননি। পরে দোকানদার আশিক খান গতকাল সকালে তাঁকে বিকাশে ৫০০ টাকা দিতে বলেন। তিনি টাকা পাঠান। আশিক খান জহুরুলকে ৫০০ টাকা দিয়ে বগুড়ার ট্রেনে তুলে দেন। আজ সকালে রত্না বেগম জানান, গতকাল রাতে জহুরুল বাড়িতে পৌঁছেছেন।
মোস্তফার স্ত্রী সাবিনা খাতুন জানান, তাঁর বড় মেয়ে বৃষ্টি এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। ছোট মেয়ে সৃষ্টি ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। তাঁর স্বামী গত বুধবার বিকেলে ঢাকা থেকে ফোন করেছিলেন। তখনই বলেছিলেন, মেয়ের জন্য থ্রি-পিচ এবং তাঁর (স্ত্রী) জন্য শাড়ি কিনেছেন। সকালে বাড়ি পৌঁছবেন বলে জানিয়েছিলেন। সাবিনা খাতুন এখন শুধুই বিলাপ করছেন, তাঁর স্বামীর সেই সকাল আর হচ্ছে না।
বাঘা উপজেলার পীরগাছা গ্রামের যুবক নবাব আলী জানান, তাঁরা আড়ানী স্টেশনমাস্টারের মাধ্যমে সম্ভাব্য সব স্টেশনমাস্টার ও জিআরপি থানায় বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত নিখোঁজ মোস্তফার কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।
– প্রথম আলো