স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন ও চিকিৎসার নানামুখী অগ্রগতির প্রভাবে দেশে গত এক দশকে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে তিন বছরের বেশি। আবার এর মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীদের আয়ু বেশি চার বছর। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এই বৃদ্ধির হার বেশি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বে গড় আয়ুর সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান নবম আর সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয়। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভূটান, মিয়ানমার ও আফগানিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেশি।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল-ইউএনএফপিএর কেন্দ্রীয় তথ্যসূত্র (ওয়ার্ল্ড পপুলেশন ড্যাসবোর্ড) অনুসারে বাংলাদেশে পুরুষের আয়ু ৭১ বছর আর নারীদের আয়ু ৭৫ বছর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই হিসাবে দেশে পুরুষের তুলনায় নারীরা চার বছর বেশি বেঁচে থাকছে। গড় আয়ু বৃদ্ধির বিষয়টিকে দেশের এক বড় অর্জন বলে মনে করছে সবাই।
যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমানে দেশে মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছর। পুরুষের গড় আয়ু ৭১ এবং নারীদের ৭৩। স্বাস্থ্যসেবায় দেশের অগ্রগতির বড় এক সূচক হচ্ছে গড় আয়ু বৃদ্ধি। মানুষ সহজে ভালো চিকিৎসা পাচ্ছে। অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা দেশেই দেওয়া হচ্ছে। উন্নতসব চিকিৎসা প্রযুক্তি সংযুক্ত করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে। পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে ব্যাপক পদক্ষেপ চলমান আছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে ১০ বছর আগে ২০০৮ সালে গড় আয়ু ছিল ৬৯ বছর। অন্যদিকে বাংলাদেশে এখন ৭২ বছর গড় আয়ু হলেও ভারতে গড় আয়ু ৬৮ দশমিক ৩, পাকিস্তানে ৬৬ দশমিক ৪, মিয়ানমারে ৬৬ দশমিক ৬, নেপালে ৬৯ দশমিক ২, আফগানিস্তানে ৬০ দশমিক ৫ বছর।
জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর উন নবী বলেন, সরকারের সমন্বিত কার্যক্রমের সুফল হিসেবে দেশে মানুষের গড় আয়ু বেড়ে গেছে। কেবল সেটাই নয়, এর সঙ্গে পুরুষের তুলনায় নারীর গড় আয়ু বেশি হয়ে গেছে, যা খুবই ইতিবাচক এক অগ্রগতির নিদর্শন। তিনি বলেন, সরকারের উদ্যোগ ও তত্ত্বাবধায়নে মানুষ যেমন আগের তুলনায় নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠেছে, তেমনি সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের ফলে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা এখন মানুষের হাতের নাগালে এসে গেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বাবলম্বী হওয়ার অনুষজ্ঞগুলো। এখানে সরকারের সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব হচ্ছে সবদিক সমন্বিতভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভূমিকা রাখা। যার মাধ্যমে দেশে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হারও কমে গেছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশ এখন সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কার্যক্রমে ঢুকে পড়েছে। এই ধারাকে শক্তিশালীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রভাব রয়েছে গড় আয়ু বৃদ্ধির ওপর।
বাংলাদেশ অবস অ্যান্ড গাইনোকলজিক্যাল সোসাইটির (ওজিএসবি) সভাপতি অধ্যাপক ডা. লায়লা আরজুমান্দ বানু বলেন, নারীর আয়ু বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বেশি ভূমিকা রাখছে গত কয়েক বছরে দেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে শিশু থেকে শুরু মাতৃত্বকালীন পর্যন্ত নানামুখী উন্নত চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসেবা ও সচেতনতার মাত্রা বৃদ্ধির পদক্ষেপগুলো। এ ছাড়া বয়সন্ধিকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সচেতনতা, বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে জাগরণ তৈরি, কম বয়সে সন্তান না নেওয়া, নিরাপদ প্রসবসহ আরো অনেক সূচকেই নারীর স্বাস্থ্যসেবা এগিয়ে গেছে। কালের কণ্ঠ