আমিন মুনশি : নিরাপদ সড়ক ও ন্যায়বিচারের দাবীতে চলমান ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে কলম ধরেছেন অনেকেই। কবিতা-গান, গল্পও লেখা হচ্ছে পত্র-পত্রিকায়। তবে ব্যতিক্রমধর্মী একটি কবিতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হতে দেখা গেছে। কবি মুহিব খানের ‘ধরিয়ে দিন’ নামক কবিতাটিতে তিনি মূলত সমালোচনা করেছেন যারা এই সমাজের অভিভাবক সেজেও বর্তমানের এই ন্যায্য দাবিতে কোন সরব ভূমিকা রাখছেন না।
পাঠকদের জন্য কবিতাটি পত্রস্থ করা হলো :
কথায় কথায় যে কারও দোষ
কই না আমি, এড়িয়ে চলি,
ব্যক্তিগত বিশ্লেষণের
লোক আমি নই, তবুও বলি-
জাফর সাহেব! কই পালালেন
ছাত্রগুলোর এ দুর্দিনে?
আপনাকে তো কিশোর গড়ার
সাধক বলেই সবাই চিনে!
গেলেন কোথায় সুলতানা ম্যাম!
চুপ কেন আজ দুঃসময়ে?
এ্যামনে তো খুব চাঙ্গা দেখি
দেশ-দরদীর চোঙ্গা লয়ে!
খুশি কবির, দরদ গভীর!
আজকে স্থবির এই সময়ে!
এ্যামনে কথার খই তো ফুটান!
আজ পিছুটান কোন সে ভয়ে?
রাশেদা কে চৌধুরী ম্যাম!
কোথায় গেলেন দিয়ে ফাঁকি?
লক্ষ হাজার কোমলমতির
অভিভাবক আপনি না কি?
চুপ কেন মুনতাসির সাহেব!
বিজ্ঞতা আজ চুপসে গেছে?
এ্যামনে তো খুব টকশো মাতান
জ্ঞান গরিমার কথার প্যাঁচে!
কবির সাহেব ঘুমান! নাকি
চাপ বেশি মুরগির আড়তে?
দেশেই! নাকি ‘তাওয়াফ’ পালন
করতে গেছেন ওই ভারতে?
মানবতার পাহারাদার
মিজান সাহেব উধাও নাকি!
চাকায় পিষে ছাত্র মরে,
আপনি নিখোঁজ, কারণটা কী?
বদরুদ্দীন উমর সাহেব
খুব তো বিলান জ্ঞানের কথা!
আজকে নিজেই জ্ঞান হারালেন!
জাগলো না আজ মানবতা?
আহহারে! ডক্টর আনোয়ার!
শুদ্ধভাষার বক্তৃতা কই?
ছাত্ররা যে লড়ছে একা!
দিন না দেখা! কৃতজ্ঞ হই!
নাসিরউদ্দীন বাচ্চু সাহেব!
সংস্কৃতি সব বৈশাখীতে?
ন্যায়-মিছিলে যোগ না দিয়ে
লেপ জড়িয়ে আছেন শীতে?
কোথায় ‘সুজন’! কই সুশাসন!
আজ নাগরিক পড়ছে মারা,
সুশীল নামের ভ-রা কই?
মঞ্চ-চেয়ার কাঁপান যারা?
কই লুকালেন শিক্ষা উজির!
ছাত্রদেরে বাইরে ছেড়ে?
ভয় ঢুকেছে? হয়তো এরাই
হঠাৎ নেবে চেয়ার কেড়ে?
কই লুকালেন লেখক কবি!
মেলায় তো বেশ বিক্রি ভালো!
এই ছেলেরাই বই কিনে, হায়!
দুঃসময়ে কী-ই বা পেলো?
প্রেম-কবিতায় পদক তো পান!
প্রেম গেলো কই জাতির তরে?
পাঠ্যবইয়েও ভাগ তো বসান!
লুকান! যখন ছাত্র মরে?
বিরাট লেখক! বিরাট কবি!
রাষ্ট্র বানায় বুদ্ধিজীবি!
‘সব মানুষের আমিই কবি’
না-ই বা চিনুক এই পৃথিবী!
শোষকরাজের পক্ষ নিতে
দক্ষ সবাই খুব তো দেখি
সব চেতনার মালিক সেজে
দাপিয়ে বেড়ান, আজ হলো কী!
আজকে সবাই নিরব কেন?
প্রজন্ম টোপ গিললো না, তাই!
প্রজন্মকে পথ ভুলাতে
পথ হারালেন আজ নিজেরাই!
অত্যাচারীর ছত্রছায়ায়
বুদ্ধিজীবির পোশাক পরে
খুব তো লাফান, আজ কেন ঘুম!
নিজের প্রভুর পতন ডরে?
বয়সগুণে শ্রদ্ধা করি
নীতির বেলায় জানাই ঘৃণা,
ফটকাবাজী ছেড়ে দেখুন
মানুষ হতে পারেন কি-না!
ইউনিসেফের নেই কেন খোঁজ!
মীনা রাজুর বিপদ যে আজ!
লেজ গুটিয়ে এনজিও সব!
স্বার্থ-পাগল সব ধড়িবাজ!
চামচা চ্যানেল, চুন্নীরা কই!
তোরাই তো তেল মারতি বেশি,
তোদের তেলেই জোর পেয়েছে
অত্যাচারীর পাষাণ পেশী।
তোদের হলুদ পক্ষপাতে
ন্যায়ের হাতে শিকল ওঠে,
আমজনতা জাগবে যখন
সুঁই লাগাবে তোদের ঠোঁটে।
শকুনরা সব আতঙ্কে আজ
চড়ুই পাখির মারের ভয়ে,
দেশ ছেড়ে ভাগ- পড়বি মারা
ক্ষিপ্ত প্রাণের এই বিজয়ে।
পুণশ্চঃ–
হারানোদের খুঁজুন সবাই,
পালানোদের ‘ধরিয়ে দিন’,
দেশ জনতার স্বার্থে সবাই
এই কবিতা ছড়িয়ে দিন!!