গানের পাখি সাবিনা ইয়াসমিন। উপমহাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তি তিনি। তার কণ্ঠে অসংখ্য গান কালজয়ী। অডিও এবং চলচ্চিত্র দুই ভুবনের গানেই তার গ্রহণযোগ্যতা আকাশছোঁয়া। তবে চলচ্চিত্রের প্লেব্যাকে সাবিনা ইয়াসমিন বিস্ময়কর এক সফল নাম। আজ প্রিয় এই কণ্ঠশিল্পীর জন্মদিন। ১৯৫৪ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। জীবন্ত এই কিংবদন্তি বাংলার বুকে বেঁচে থাকবেন শত শত বছর। তার কণ্ঠের দেশের গান আমাদের পুলকিত করে, অনুপ্রাণিত করে, আন্দোলিত করে। দেশের গান ছাড়াও চলচ্চিত্রে হাজার হাজার গান গেয়েছেন তিনি। আর এমনি করেই গানে গানে সাবিনা ইয়াসমিন হয়ে উঠেছেন এ দেশের তথা বাংলাভাষীর অতি প্রিয় একজন শিল্পীতে।
গুণী এই সংগীতশিল্পী এবার তার জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল রাতের ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। সেখানে তিনি তার প্রিয় বান্ধবীদের সঙ্গে জন্মদিন উদযাপন করবেন এবং বেশ কটা দিন নিজের মতো করেই সময় কাটাবেন।
জন্মদিন প্রসঙ্গে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘জন্মদিন এলেই আব্বা আম্মা এবং আমার বোনদের খুব মিস করি। কিন্তু তার পর সবার ভালোবাসা পেয়ে আমি সে কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করি। দেশে বিদেশ থেকে অনেকেই শুভেচ্ছা জানান। তবে এবার জন্মদিনে আমার বান্ধবী মিলিয়া, বাবলী, রীতা প্রমুখের সঙ্গে কাটবে বলে ভীষণ ভালো লাগছে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’ প্রয়াত বরেণ্য সুরকার-সংগীত পরিচালক রবিন ঘোষের সংগীত পরিচালনায় এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ সিনেমাতে ১৯৬২ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম গান করেন। তবে ১৯৬৭ সালে আমজাদ হোসেন ও নূরুল হক বাচ্চু পরিচালিত ‘আগুন নিয়ে খেলা’ সিনেমাতে আলতাফ মাহমুদের সংগীত পরিচালনায় ‘মধু জোছনা দীপালি’ গানটি গাওয়ার মধ্য দিয়ে প্লে-ব্যাক গায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। বরেণ্য এই সংগীতশিল্পী ১৯৮৪ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারসহ সর্বোচ্চ ১৩ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৫ সালে ‘সুজন সখী’ সিনেমাতে গান গাওয়ার জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এর পর বিভিন্ন সময়ে আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, চাষী নজরুল ইসলামের ‘চন্দ্রনাথ’, মইনুল হোসেনের ‘প্রেমিক’, বুলবুল আহমেদের ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, আমজাদ হোসেনের ‘দুই জীবন’, কাজী হায়াতের ‘দাঙ্গা’, মতিন রহমানের ‘রাধা কৃষ্ণ’, মোহাম্মদ হোসেনের ‘আজ গায়ে হলুদ’ ও চাষী নজরুল ইসলামের ‘দেবদাস’ চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭১ সালে নঈম গহরের লেখা ও আজাদ রহমানের সুরে সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’ গানটি মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম প্রেরণা জুগিয়েছিল। আলতাফ মাহমুদের সুর সংগীতের দশটি গান নতুন করে সাবিনা ইয়াসমিন গেয়েছেন যা আগামী মাসে ইমপ্রেসের ব্যানারে বাজারে আসবে। এতে দুটি গানে সাবিনার সঙ্গে গেয়েছেন লিনু বিল্লাহ।
সাবিনা ইয়াসমিন সাতক্ষীরার সন্তান। বাবার নাম লুতফর রহমান ও মা বেগম মৌলুদা খাতুন। তার ৫ বোনের মাঝে ৪ বোনই গান করেছেন। তারা হলেন ফরিদা ইয়াসমিন, ফওজিয়া খান, নীলুফার ইয়াসমিন এবং সাবিনা ইয়াসমিন। দাম্পত্য জীবনে সাবিনা ইয়াসমিন এক কন্যা ফাইরুজ ইয়াসমিন ও এক পুত্র শ্রাবণের জননী।
সাবিনা ইয়াসমিনের জন্মদিনে আমাদের সময়ের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা।
সূত্র : আমাদের সময়