টুং টাং টুং টাং। খাবার টেবিলে শব্দটা কি পরিচিত নয়? কাটলেট কাটার সময়, কখনো মিষ্টি খাওয়ার সময়, আবার কখনো তরকারি বেড়ে দেওয়ার সময়। খাওয়ার সময় চামচের এই সুর কানে বাজেই। ছোট-বড় চামচ, কাঁটাচামচ, ছুরি এসব তো টেবিলের পরিচিত উপকরণ। কিন্তু এই কাটলারি পণ্যেও আজকাল দেখা যায় বৈচিত্র্য আর নান্দনিকতা।
একেক চামচের একেক কাজ। মডেল: চমক, ছবি: নকশাদাদি-নানিদের আমলে অনেকেই হয়তো দেখছেন পিতলের চামচ-ছুরি। কেউ কেউ হয়তো সোনা বা রুপার চামচও দেখেছেন। বিশেষ করে নবজাতকের জন্য সোনার চামচ, রুপার চামচের ব্যবহার দেখা যায় কোনো কোনো পরিবারে। শখের এসব চামচের ব্যবহার কমে গেছে অনেক বেশি দাম ও সহজলভ্য না হওয়ার কারণে। তবে চাইলেই ফরমাশ দিয়ে গড়িয়ে নিতে পারেন।
এ তো গেল শখের কথা। নিত্যদিন ব্যবহারের জন্য বাজার ঘুরে পেতে পারেন স্টেইনলেস স্টিল, পোরসেলিন, মেলামাইন, প্লাস্টিক, কাঠ এমনকি পোড়ামাটির চামচও।
ফল খেতে কঁাটাচামচরন্ধনশিল্পী নাহিদ ওসমান পরামর্শ দিলেন স্টেইনলেস স্টিলের চামচের সেট ব্যবহার করতে, যা স্বাস্থ্যসম্মত। অন্য সব ধাতুর চামচও ব্যবহার করা যাবে। তবে প্লাস্টিকের চামচ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে বললেন তিনি। জানালেন, একেক আকৃতি ও গঠনের চামচের ব্যবহার হয় ভিন্ন ভিন্ন। আছে চা-চামচ, টেবিল চামচ, ভাতের চামচ, তরকারির চামচ, ডালের চামচ ইত্যাদি। মিষ্টি, ফল ও মূল খাবারের জন্য আছে ভিন্ন কাঁটাচামচ। বাজারে গিয়ে চাইলেই দোকানিরা আপনাকে চিনিয়ে দিবে কোনটা কী চামচ।
ব্যবহার
কোন চামচ কিসের জন্য ব্যবহার করতে হয়, তার একটা ধারণা দিলেন রন্ধনশিল্পী রাহিমা সুলতানা।
■ একটি কাটলারি সেটে সবচেয়ে ছোট্ট যে চামচ হয়, সেটা টি স্পুন বা চায়ের চামচ। চায়ে দুধ-চিনি নাড়া ছাড়াও মিষ্টি জাতীয় জিনিস খেতে এই চামচ মাঝেমধ্যে ব্যবহার করা যায়। তবে এর চেয়ে একটু বড় আকৃতির যে চামচ আছে, সেটা ডেজার্ট স্পুন বা মিষ্টির চামচ। আমরা সাধারণত এটাকে চা-চামচ মনে করি। কিন্তু চা-চামচ এর থেকেও ছোট আকৃতির হয়।
■ খাবারের চামচ হয় আরেকটু বড়। মাঝারি আকৃতির। মূল খাবার খেতে হয় এই চামচ দিয়ে। এগুলোই আসলে টেবিল চামচ।
খাবার বুঝে নানা রকম চামচ, কাঁটা, ছুরি■ মিষ্টি খাবার জন্য ছোট কাঁটাচামচও ব্যবহার করা হয়। এগুলো সাধারণত তিন-চার কাঁটার হয়ে থাকে। এটাকে বলা হয়, ডেজার্ট ফর্ক।
■ ফল ও সালাদ খাবার জন্য থাকে দুই বা তিন কাঁটার চামচ। অনেক সময় ডেজার্ট ফর্ক দিয়েও সালাদ বা ফল খাওয়া যায়।
■ মূল খাবার খাওয়ার জন্য মাঝারি আকৃতির কাঁটাচামচ ব্যবহার করতে হয়।
■ স্যুপ খাবার জন্য স্যুপের আলাদা চামচ ছাড়াও ইদানীং ব্যবহার হচ্ছে মাঝারি আকৃতির ও গোল মাথার চামচ। এমনকি স্যুপ বেড়ে দেওয়ার জন্যও ব্যবহার করা হয়, ডাবুর আকৃতির চামচ।
মিষ্টি তুলতে এমন চিমটা ব্যবহার করতে পারেন■ টেবিল চামচের চেয়ে খানিকটা বড় হয় তারকারির চামচ বা কারি স্পুন।
■ ভাত ও পোলাও বাড়তে ব্যবহার হয় বড়, চওড়া, এককথায় ফ্ল্যাট চামচ।
■ লবণের চামচ তো একেবারেই ছোট আকৃতির হয়।
■ আচারের জন্য আছে আলাদা চামচ। এগুলোকে বলা হয় পিকলস স্পুন।
■ পানি জাতীয় কিছু পান করার সময় যদি নাড়ার প্রয়োজন হয়, তবে সেটার জন্যও পাবেন ভিন্ন চামচ। যাকে বলা হয়, ড্রিংক স্পুন। চিকন দেহ আর ছোট্ট গোল মাথাওয়ালা এই চামচগুলো গ্লাসের দৈর্ঘ্যের চেয়ে লম্বা হয়, যেন গ্লাসের ভেতর চামচ ডুবে না যায়।
স্যুপ বা ডালের জন্য আলাদা চামচ■ রোস্টের জন্য অনেকে টং ব্যবহার করে থাকেন। এ ধরনের চামচ শুকনা খাবার, যেমন কাবাব বেড়ে দেওয়ার জন্য উত্তম। কেননা, টং দিয়ে রোস্টের ঝোল বেড়ে দেওয়া যায় না। তবে আজকাল বাজারে অনেকটা টেবিল চামচের মাথার মতো মাথাওয়ালা টং পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো দিয়ে ঝোল ওঠানো সম্ভব।
■ ছুরি কিন্তু দুই ধরনের। মাছ, মাংস কেটে খাওয়ার জন্য বড় ছুরিটা ব্যবহার হয়। আর ছোট ছুরিটা কাজে লাগে নাশতার সময়, পাউরুটিতে মাখন মাখাতে।
– প্রথম আলো