শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ‘উসকানিমূলক মিথ্যা’ প্রচারের অভিযোগে আইসিটি আইনের মামলায় আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়েছে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত।
শহিদুলের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী সারা হোসেন ও এহসানুল হক সমাজি। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ আদালতের পিপি আবদুল্লাহ আবু।
দৃক গ্যালারি ও পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা শহিদুলের আইনজীবীরা জামিনের জন্য হাই কোর্টেও গিয়েছিলেন। কিন্তু হাই কোর্ট জামিন না দিয়ে জজ আদালতেই বিষয়টি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়।
সে অনুযায়ী মঙ্গলবার মহানগর দায়রা জজ আদালতে শুনানি হলেও জামিন মেলেনি শহিদুলের। জামিন চাইলে এখন আবার তাদের হাই কোর্টে যেতে হবে। শহিদুলের আইনজীবীরা সে ইংগিতই দিয়েছেন।
অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শহিদুল অগাস্টের শুরুতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের বিষয়ে কথা বলতে বেশ কয়েকবার ফেইসবুক লাইভে আসেন।
ওই আন্দোলনের বিষয়ে আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সরকারের সমালোচনাও করেন।
এরপর ৫ অগাস্ট রাতে শহিদুল আলমকে তার ধানমণ্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলা করে পরদিন তাকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় করা এ মামলায় ‘কল্পনাপ্রসূত তথ্যের’ মাধ্যমে জনসাধারণের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে ‘মিথ্যা প্রচার’ চালানো, উসকানিমূলক তথ্য উপস্থাপন, সরকারকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ও অকার্যকর’ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘অবনতি ঘটিয়ে’ জনমনে ‘ভীতি ও সন্ত্রাস ছড়িয়ে’ দেওয়ার ষড়যন্ত্র এবং তা বাস্তবায়নে ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ‘অপপ্রচারের’ অভিযোগ আনা হয়।
গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে শহিদুল শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অভিযোগ করে তার স্ত্রী রেহনুমা আহমেদ হাই কোর্টে গেলে আদালত এই আলোকচিত্রীকে হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
কিন্তু তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে আবার ডিবি হেফাজতে ফেরত পাঠিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পক্ষ থেকে বলা হয়, শহিদুলকে ভর্তি করার মত অবস্থা তারা দেখেননি।
রিমান্ড শেষে ঢাকার হাকিম আদালত শহিদুলের জামিন আবেদন নাকচ করে দিলে তার আইনজীবীরা ১৪ অগাস্ট মহানগর দায়রা জজ আদালতে যান। বিচারক আবেদনটি ১১ সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য রাখলে তারা শুনানির তারিখ এগিয়ে আনার জন্য আরেকটি আবেদন করেন।
কিন্তু বিচারক তা গ্রহণ না করলে ২৬ অগাস্ট শহিদুল আলমের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন চেয়ে ওই আদালতেই ফের আবেদন করা হয়। আদালত তা শুনানির জন্য গ্রহণ না করায় গত ২৮ অগাস্ট শহিদুলের জামিন আবেদন নিয়ে তার আইনজীবীরা হাই কোর্টে যান।
কয়েক দিন আটকে থাকার পর গত সপ্তাহে আবেদনটি বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি খন্দকার দিলীরুজ্জামানের বেঞ্চের কার্য তালিকায় আসে। কিন্তু ওই বেঞ্চ আবেদনটি শুনতে বিব্রত বোধ করলে নিয়ম অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি শুনানির জন্য নতুন বেঞ্চ ঠিক করে দেন।
বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ বিষয়ে শুনানি করে জজ আদালতকে মঙ্গলবারের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বলে।
শহিদুল গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে এর নিন্দার পাশাপাশি তার মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছে দেশি-বিদেশি নানা সংগঠন ও মানবাধিকারকর্মীরা।
তার পক্ষে দাঁড়ানো ব্যক্তিরা বলছেন, শহিদুলকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে সরকার বাক স্বাধীনতার পথ রুদ্ধ করতে চাইছে।
নোবেলজয়ী ডেসমন্ড টুটু, শিরিন এবাদি, মুহাম্মদ ইউনূসের পর অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও দাঁড়িয়েছেন কারাবন্দি আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের পক্ষে।
অন্যদিকে সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, শহিদুল আন্দোলনরত শিশুদের ‘ব্যবহার করে যারা দেশকে অস্থির করার ষড়যন্ত্র করেছিলেন’।
অগাস্টের শেষে এক অনুষ্ঠানে শহিদুলের বিষয়ে ইংগিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “অনেকে অনেক জ্ঞানী-গুণী, অনেক অনেক আঁতেল, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন… আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্নরা কী করেছে? ডিজিটাল বাংলাদেশ আমি করে দিয়েছি, আর তারই সুযোগ নিয়ে সোশাল মিডিয়াতে এবং বিভিন্ন জায়গায় অপপ্রচার চালিয়ে মানুষকে মিথ্যা প্রচার চালিয়েছে।
“তাদের বিরুদ্ধে যখন ব্যবস্থা নিলাম, তখনই চারিদিকে যেন হাহাকার। আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও বিভিন্ন রকম চাপ। দেশে-বিদেশে সকলের মাথায় রাখা উচিত।”
– বিডিনিউজ