তাসলিমা আখতার: জীবনে প্রথম এতো লম্বা সময় ঘরে থাকলাম। করোনার অভিজ্ঞতা নিয়ে তৃতীয় দফা টেস্টে ২৩ দিন পর অবশেষে নেগেটিভ রিপোর্ট এলো ২৩ তারিখ। জোনায়েদ সাকিও করেনামুক্ত হয়েছেন ১৯ তারিখে। এসময়ে করোনায় ‘সামাজিক দূরত্ব’, ‘সামাজিক বিচ্ছিন্নতা’য় চারপাশে শঙ্কা, ভয় ভালোবাসা কীভাবে ঘিরে থাকে কিছুটা হলেও টের পেলাম। যেটা অভিজ্ঞতা হিসেবে অনেক বড় পাওয়া। মধ্যবিত্ত পরিমন্ডল আর শ্রমজীবির করোনা ভীতি এবং সতর্কতা একেবারেই ভিন্ন। এ নিয়ে অন্য সময় আলাপ করা যাবে। আপনাদের ভালোবাসা ও দোয়ায় এখন পুরোপুরি সুস্থ আছি। সবার ভালোবাসা, পাশে থাকা প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নেয়া বন্ধু-স্বজন সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অনেক অনেক ভালোবাসা।
১৫ দিন পর পুরো সুস্থ অবস্থায় যখন প্রথম টেস্ট করালাম পজেটিভ আসলো। একটু হতাশই হলাম। দ্বিতীয় দফায় ১৯ তারিখ আবারও পজেটিভ। একটু চাপই লাগছিলো। পুরো সুস্থ তারপরও। পরিচিতরা কেউ কেউ বললেন, কোনো উপসর্গ না থাকলে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যাবে। অনেকে আর টেস্ট করার বিষয়ও উৎসাহী করলেন না। কেউ বললেন ১৪ দিন পর, কেউ বলেন ২১ দিন পর স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায়। ১৪ দিনের পর সুস্থ ব্যক্তির রিপোর্টে ডেড সেল নাকি পজেটিভ হিসেবে দেখায়। যার সংক্রমণের কোনো সুযোগ নেই। এমনকি চিকিৎসকরাও কেউ কেউ বললেন। শুনেছি অনেকে সুস্থ হবার পরও কারো ১ মাস কারো ২ মাস এমনকি কারো আড়াই, তিন মাসও পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে এবং তাদের প্রত্যেকের মানসিক অবস্থা খুব খারাপ গেছে। সংক্রমণ যাতে না ছড়ায় তাই তারা বিবেচনা থেকে বাড়িতেই ছিলেন একঘরে। এ ধরনের বিভ্রান্তির মধ্যে করোনা আক্রান্তরা কী করবে সে বিষয়ে স্পষ্টতা না থাকলে সুস্থ ব্যক্তি সামাজিকভাবে একঘরা থাকতে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।
তাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের এ নিয়ে সঠিক তথ্য ফলাও করে সবাইকে জানানো উচিত। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দুনিয়া যখন নতুন করে ভাবছে কী করে সামাল দেবে তখন আমাদের দেশেও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না থাকলে বিপদ কমার বদলে বাড়তেও পারে। এই কঠিন সময়ে সবাই সাবধানে থাকবেন, ভালো থাকবেন একে অপরের পাশে থাকবেন। সবার পাশে থাকা আর ভালোবাসাই আমাদের প্রাণ শক্তি। আবারও সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানাই এই সময়ে পাশে থাকবার জন্য। সমাজ আর চারপাশের মানুষ ছাড়া একা বেঁচে থাকা যে কঠিন করোনা সেই সত্যটাই আবারও সামনে আনলো। একা একা বাঁচা যায় না। সবাইকে নিয়েই সমাজবদ্ধ হয়ে বাঁচার শক্তি মেলে।