নারিকেল পাড়ার লোকের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে লম্বা জাতের গাছ।মানুষ ঝুঁকছে খাটো জাতের নারিকেল চাষের দিকে। ভিয়েতনাম থেকে আনা খাটো জাতের চারা এযাবত বিক্রি হয়েছে সাড়ে সাত লাখ।
বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের জাতীয় পরামর্শক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এম. এনামুল হক বলেন, আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের কারণে মানুষ এখন ছেলে-মেয়েদের লম্বা গাছে উঠিয়ে নারিকেল পাড়াতে চায় না। দেশে নারিকেল পাড়ার জন্য কিছু সংখ্যাক মানুষ আছে যাদেরকে গাছুয়া বলা হয়। গাছুয়ারা গাছ থেকে পাড়া বাবদ অর্ধেক সংখ্যাক নারিকেল নিয়ে থাকে। এদের সংখ্যাও দিনে দিনে কমছে। এছাড়া ঝড়ের কবলে পড়েও লম্বা নারিকেল গাছের আগা ভেঙ্গে যায়। লম্বা জাতের নারিকেল গাছ এখন আর লাভজনক নয়। এই ধরণের গাছ লাগিয়ে মানুষের আর পোষায়না। তাই মানুষ লম্বা জাতের নারিকেল গাছের চারা লাগানোর ব্যাপার নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছে। তারা পুরানো গাছ কেটে ফেলে খাটো জাতের নারিকেল চাষের দিকে ঝুঁকছে।
তিনি বলেন, ‘বাস্তব এই অবস্থার কথা বিবেচনায় নিয়ে আমরা বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ভিয়েতনাম থেকে এ যাবত সাড়ে সাত লাখ খাটো জাতের নারিকেলের চারা এনে দেশের হর্টিকালচার সেন্টার গুলোর মাধ্যমে বিক্রি করেছি। খাটো জাতের এসব গাছে তিন বছরের মধ্যে ফল ধরার কথা। ইতোমধ্যে এর অনেকগুলোতে ফুল ও ফল ধরতে শুরু করেছে। পটুয়াখালির কলাপড়ায় ১৮০টি গাছের চারা লাগানোর তিন বছরেরও কম সময়ে অর্ধেক সংখ্যাক গাছে ফুল এসেছে। আবার অনেক স্থানের গাছে ফলও ধরেছে। হর্টিকালচারগুলো থেকে চারা প্রতি ভিয়েতনামের নারিকেলের চারা ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ভারতসহ বিশ্বের নারিকেল উৎপাদনকারী দেশগুলো অনেক আগেই খাটো জাতের নারিকেল চাষের প্রচলন করেছে। এখনো পর্যন্ত লম্বা গাছ থেকে নারিকেল পাড়ার সহজলভ্য কোনো প্রযুক্তি আমরা পাইনি। ভারতে কিছু প্রযুক্তি আছে, তবে তা আমরা আমাদের লম্বা গাছের উপযোগি করতে পারিনি।’
থাইল্যান্ডে বানরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে লম্বা গাছ থেকে নারিকেল পাড়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য সেখানে বানরের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে উঠেছে। এই ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষণ নেয়া বানর অনেক দামে বিক্রি হয়। আমাদের দেশে বানর ও হনুমানকে প্রশিক্ষণ দিয়ে গাছ থেকে নারিকেল পাড়া বা অন্য কোনো কাজে লাগানো যায় কিনা তা বন বিভাগ বা সংশ্লিষ্টরা ভেবে দেখতে পারে।