পাবনায় কর্মরত একমাত্র নারী সাংবাদিক সুবর্ণা আক্তার নদীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টায় শহরের রাধানগর মহল্লায় নিজ বাসার সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। সুবর্ণা নদী বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘আনন্দ টিভি’র পাবনা প্রতিনিধি এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘দৈনিক জাগ্রত বাংলার’ সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। সুবর্ণা নদী জেলার আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর মেয়ে। তার ৬ বছরের একটি শিশু কন্যা সন্তান রয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সুবর্ণার সাবেক শ্বশুর আবুল হোসেনকে আটক করেছে। এদিকে বুধবার দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সাংবাদিকদের বিশাল মানববন্ধন থেকে হত্যাকারীদের গ্রেফতারে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে।
পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, সূবর্ণা নদী শহরের রাধানগর মহল্লায় আলিয়া মাদরাসার গলিতে ভাড়া বাসায় মা ও একমাত্র শিশু কন্যা নিয়ে বসবাস করতেন। মঙ্গলবার রাত ১০ টার দিকে প্রেসক্লাব সড়কের রানা শপিং কমপ্লেক্স থেকে তার অফিসে কাজ শেষে বাসায় ফিরার পথে বাসার সামনে আগে থেকে উৎপেতে থাকা দুস্কৃতিকারীরা সূর্বণা নদীর পেটে, মাথা ও ঘারে অতর্কিত ভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এসময় তার চিৎকারে বাসা থেকে মা ও মেয়ে এবং আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সূবর্ণা নদীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে রাতেই পাবনা প্রেসক্লাব ও পাবনা রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতৃবৃন্দসহ সাংবাদিকরা হাসপাতালে ছুটে যান। পাবনার অতিরিক্ত সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাসসহ জেলা পুলিশ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবায়দুল হক জানান, নিহত সুর্বণা নদীর মা মোছা: মর্জিনা খাতুন বাদী হয়ে বুধবার ৩ জন নামীয় আসামি সহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামি করে পাবনা সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নারী সাংবাদিক সুবর্ণা নদীর সাবেক শ্বশুর শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবুল হোসেনকে আটক করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে এ হত্যাকান্ডের প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করতে না পারলেও কয়েকটি ইস্যুকে সামনে নিয়ে পুলিশ মাঠে নেমেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
এদিকে বুধবার দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাবের সামনে নারী সাংবাদিক সুবর্ণা আক্তার নদীকে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে সাংবাদিকদের বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন থেকে হত্যাকারীদের গ্রেফতারে পুলিশকে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে।
পাবনা সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি আব্দুল মতীনের সভাপতিত্বে মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন, প্রবীণ সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি. পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক শিবজিত নাগ, সাধারন সম্পাদক আখিঁনুর ইসলাম রেমন, পাবনা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারন সম্পাদক কাজী বাবলা, সংবাদপত্র পরিষদের সাধারন সম্পাদক শহিদুর রহমান শহিদ, দৈনিক বিবৃতি সম্পাদক ইয়াছিন আলী মৃধা রতন, এনটিভির এবিএম ফজলুর রহমান, সিনসা সম্পাদক মাহবুব আলম, পাবনা টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএ আসাদ প্রমুখ। বক্তারা এঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানান এবং মানববন্ধন থেকে হত্যাকারীদের গ্রেফতারে পুলিশকে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
সাংবাদিক সুবর্ণা আক্তার নদীর প্রথম স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হলে দ্বিতীয় বিয়ে হয়। যৌতুক ও শারীরিক নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে ২০১৭ সালের ৩০ মে তার ২য় স্বামী রাজিব হোসেনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে ছিলেন তিনি। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। ওই মামলার কারণেই সুবর্ণাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার বড় বোন চম্পা খাতুন।
বড় বোন চম্পা খাতুন জানান, ছোট বোন সাংবাদিক সুবর্ণা আক্তার নদীর সাথে তিন-চার বছর আগে শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবুল হোসেনের ছেলে রাজীবের সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে হয়। বছর খানেক আগে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর সুবর্ণা পাবনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আদালতে একটি যৌতুক মামলা করেন। এ মামলায় সুবর্ণা তার সাবেক স্বামী রাজীব ও তার বাবা আবুল হোসেনসহ তিনজনকে আসামি করেন। মঙ্গলবার এই মামলার সাক্ষ্য দেয়ার দিন ছিল। এতে সুবর্ণা তার পক্ষে আদালতে সাক্ষ্যও উপস্থাপন করেন। মামলায় ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কায় আসামিরা পরিকল্পিতভাবে সুবর্ণাকে হত্যা করেছে বলে তিনি দাবি করেন।