কোরবানির ঈদ সামনে রেখে বাসের জন্য উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ঘরমুখো মানুষের অনেককে দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে; কেউবা ঠিক সময়ে স্বস্তি নিয়ে ধরছেন বাড়ির পথ।
বাসের কাউন্টার ব্যবস্থাপকরা বলছেন, ফেরার সময়ে মহাসড়কে যানজটের কারণে বাস ঢাকায় আসতে দেরি হচ্ছে, সে কারণে দেরি।
উত্তরাঞ্চলের রুটে টাঙ্গাইলে যানজটের কারণে গাড়ি ফিরতে দেরি হয়েছে। আর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রুটের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে জটের কারণে ওই দেরি।
অনেক অপেক্ষা করেও প্রিয়জনের টানে ঢাকা ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ; কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেরির সময় বেশ কয়েক ঘণ্টাও ছাড়িয়েছে।
সকাল সাড়ে ৮টায় শ্যামলী পরিবহনের দিনাজপুরগামী বাসের জন্য যাত্রীদের কল্যাণপুর থেকে গাবতলী নেওয়া হয় পৌনে ১১টায়।
সেই বাসের জন্য কল্যাণপুর কাউন্টারে সকাল ৮টা থেকে অপেক্ষায় ছিলেন আয়েশা খাতুন। প্রায় তিন ঘন্টা দেরি হলেও একটুপর বাস ছাড়বে ওতেই খুশি তিনি।
আয়েশা বলেন, “অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছি। বলেছে, রাস্তায় জ্যাম। এখন ছোট বাসে গাবতলী নিয়ে যাচ্ছে। এরপর সেখান থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে রওনা করবে। দেখি কী হয়।”
শ্যামলী পরিবহনে সাড়ে ৮টার গাড়িতে রংপুরের যাত্রীরাও বাড়ির পথ ধরতে পারেন পৌনে ১১টায়। তবে কুষ্টিয়াগামী ১১টার বাস সময়ের আগেই কাউন্টারে এসে পৌঁছায়।
দুটি বাস দেরির কারণ জানতে চাইলে গাবতলী এলাকার যানজটকে দায়ী করেন শ্যামলী পরিবহনের কল্যাণপুর কাউন্টারের ব্যবস্থাপক শাহজাহান সিরাজ।
“গাবতলীতে গাড়ি ঘুরতে দেরি হচ্ছে, একেতো মানুষের চাপ আবার গরু বাজার। এখন পর্যন্ত মহাসড়কে তেমন যানজট নাই। বিকাল বা সন্ধ্যায় পরিস্থিতি কেমন থাকে বলতে পারব না।”
রোববার রাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজটের কারণে গাড়ি ফিরতে দেরি হলেও শিডিউল বিপর্যয় ঘটেনি বলে জানান হানিফ এন্টারপ্রাইজের কল্যাণপুর কাউন্টারের ব্যবস্থাপক একেএম রইসুল আলম সবুজ।
বেলা ১১টার দিকে তিনি বলেন, “রাতে টাঙ্গাইলে জ্যাম ছিল, এখন ক্লিয়ার হয়ে গেছে। আজকে বিকালে একটু বাজে অবস্থা হতে পারে।”
হানিফ এন্টারপ্রাইজে সাড়ে ১১টার গাড়ির জন্য অপেক্ষার সময় কথা হয় গাইবান্ধার যাত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে। আগে কেনা টিকিটে পরিবারের উদ্দেশ্যে রওনা করেছেন মণ্ডল গ্রুপের এই ব্যবস্থাপক।
সোয়া ১১টার দিকে তিনি বলেন, “এখন কাউন্টারে আসলাম মাত্র। আশা করছি, ঠিক সময়ে বাস ছাড়বে। মানুষতো কম, বেশিরভাগ মানুষ আগে ফ্যামিলিকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।”
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে জটের কারণে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন পরিবহনের বাস ফিরতে দেরি হচ্ছে; ফলে কোনো কোনো পরিবহন বাস আসার প্রেক্ষিতে বিক্রি করছিল টিকেট।
টিকেটের জন্য দুপুর ১টার দিকে অনেককে অপেক্ষা করতে দেখা যায় ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ রুটের গোল্ডেন লাইন পরিবহনের সামনে; তাদেরই একজন ফরিদপুরের যাত্রী ইমতিয়াজ শাওন।
তিনি বলেন, “টিকেটের চাইছি, বলল রাস্তায় জ্যাম আছে। গাড়ি আসলে টিকেট দিবে। কখন গাড়ি আসে কখন দেয় জানি না।”
ওই কাউন্টারের কর্মী মোস্তাফিজ বলেন, “ফেরিঘাটে জ্যাম থাকবেই। সে কারণে আমরা আগে টিকেট না দিয়ে গাড়ি আসার প্রেক্ষিতে টিকিট দিচ্ছি।”
ঈদযাত্রার তৃতীয় দিন রোববার ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে যাত্রীর ভিড় ছিল কম। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন
সে সময় দুপুর ১টার বাসটি টার্মিনালে এসেছে বলে যাত্রীদের হাঁক দিতে দেখা যায় গোল্ডেন লাইনের আরেক কর্মীকে।
বাস ছাড়তে দেরি হবে না বলে স্বস্তিতে ছিলেন চুয়াডাঙ্গার যাত্রী উজ্জল হোসেন; নিজের বাস পূর্বাশা পরিবহনে ‘দেরি হবে কি-না’ সেটা জেনেই অফিস থেকে রওনা করেছেন বলে জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এই কর্মী।
উজ্জল বলেন, “ফোন করেছিলাম গাড়িতে ডিলে আছে কি-না। বললো, ঠিক দেড়টায় ছাড়বে। সে অনুযায়ী আসছি। দেখি রাস্তায় কেমন থাকে।”
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে পারাপারে সময় তীব্র যানজটে পড়তে হচ্ছে বলে জানান এসডি পরিবহনের গাবতলী কাউন্টারের ব্যবস্থাপক শেখ গোলাম রাব্বী স্বপন। চুয়াডাঙ্গা, যশোর, মাগুরা ও যশোর রুটে চলে তাদের বাস।
স্বপন বলেন, “কাল (রোববার) সকালে যশোর থেকে যে বাস রওনা করেছে সেটা গাবতলী এসে পৌঁছাইছে আজ (সোমবার) সকাল ১০টায়। কাল বিকাল থেকে ভোর পর্যন্ত ফেরিঘাটে ছিল। গরুবাহী গাড়িকে আগে পার করা হচ্ছে ফেরিতে।”
সকালের দিকে টার্মিনালে যে ভিড় ছিল বিকালের দিকে সেটা অনেক বাড়তে থাকে। কিছু বাসকে ছাদেও যাত্রী নিয়ে পাটুরিয়া ফেরিঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেতে দেখা যায়।
মানুষের চাপ আর গরুবাহী গাড়ির কারণে রাজধানীর শ্যামলী এলাকা থেকে গাবতলী পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট দেখা যায়। তবে গাড়ি চলতি অবস্থায় রাখতে ব্যস্ত ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। – বিডিনিউজ