মেক্সিকোতে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত বামপন্থী প্রার্থী আন্দ্রেজ ম্যানুয়েল ওবরাদোরের সম্ভাব্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গর্ভপাত নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে গর্ভপাতের দায়ে কারান্তরীণ হওয়া নারীদের মুক্তির বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। তারা মনে করছেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন প্রেসিডেন্ট হয়তো তাদের ক্ষমা করে দেবেন। তবে এখন ক্ষমা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে এমন বিষয়ে কাউকে অপরাধী সাব্যস্ত করার পথ বন্ধ করে দেবে না। স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে দেশটির আইন পরিবর্তনের দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, যেহেতু মেক্সিকোর বিভিন্ন প্রদেশের স্বতন্ত্র আইনি ব্যাবস্থা রয়েছে সেহেতু প্রদেশ পর্যায়ে গর্ভপাতের বিষয়ে আইন সংশোধনের ব্যবস্থা করতে হবে। গত নির্বাচনে ওবরাদোরের দল ১৯টি প্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। ওই প্রদেশগুলোতে আইন সংশোধন তাদের জন্য সহজ হবে।
২০১৮ সালের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসেন বামপন্থী প্রার্থী ওবরাদোর। তবে তিনি এখন দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। তবে মন্ত্রী হিসেবে তিনি যাদের নির্ধারণ করেছেন তাদের একজন ওলগা সানচেজ কোরডেরো। তিনি যোগ দেবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে। মেক্সিকোতে এই প্রথমবারের মতো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন কোনও নারী। ওলগা সানচেজ কোরডেরো জানিয়েছেন, তিনি নারীদের গর্ভপাতের অধিকার স্বীকার করেন। যেসব নারীদের গর্ভপাতের দায়ে কারাবন্দি করা হয়েছে তাদেরকে মুক্ত করার বিষয়ে তিনি আইনি পদক্ষেপ নেবেন। স্বেচ্ছায় গর্ভপাত ঘটানো নারীদের সঙ্গে মেক্সিকোতে এতোদিন ধরে সাজা দেওয়া হতো এমন নারীদেরও যারা গর্ভপাতে সহায়তা করেছেন।
সমস্যা হচ্ছে ওবরাদোরের সরকারটি হতে যাচ্ছে জোট সরকার। তিন শরিক দলের একটি হচ্ছে চরম ডানপন্থী ‘পাত্রিদো এনকুয়েন্ত্রো সোসিয়্যাল।’ তাদের অভিযোগ, ওবরাদোর প্রচারণার সময় তিনি বলেছিলেন, গর্ভপাতের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে তা নির্ধারণে গণভোটের আয়োজন করা হবে। কিন্তু রক্ষণশীল ও প্রগতিশীল, উভয়পক্ষই এ বিষয়ে গণভোটের সিদ্ধান্তকে গ্রহণযোগ্য মনে করছেন না। গর্ভপাতের দায়ে অভিযুক্ত নারীদের আইনি সহায়তা দেওয়া প্রতিষ্ঠান ‘গ্রুপো ডি ইনফরমেসিওন এন রিপ্রোডাকসিওন এলেগিদার’ পরিচালক রেজিনা টেমস বলেছেন, মানুষের অধিকার অন্য কারওর মতামতের ভিত্তিতে নির্ধারিত হতে পারে না। অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া রাষ্ট্রের কাজ। আর রক্ষণশীলদের সংগঠন ফ্রেনতে নাসিওনালে পোর লা ফামিলিয়ার’ সহ-সভাপতি লিওনার্দো গার্সিয়া কামারেনা বলেছেন, গণভোট একটি ‘বিতর্কিত’ পদ্ধতি। ফলাফল যা-ই হোক না কেন তিনি মনে নেবেন না।
লিওনার্দো গার্সিয়ার ভাষ্য, ‘এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে তা হবে মেক্সিকোর জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত। যে আইন পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে তার জন্য তিন কোটি মেক্সিকান ওবরাদোরকে ভোট দেননি।’ এই সংগঠনটি গত ২০ অক্টোবর ওবরাদোরের অফিসের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। তাদের দাবি, সানচেজ কোরডেরোর নিয়োগ বাতিল করা।
অন্যদিকে গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষেও রয়েছে সরব কণ্ঠ। নারীরা, বিশেষ করে রাজনীতিতে সক্রিয় নারীরা, সানচেজ কোরডেরোর পাশে দাঁড়িয়েছেন। গত দুই মাসে মেক্সিকোর সংসদে গর্ভপাতকে অপরাধের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য তিনটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। এসব প্রস্তাবের ভাষা ভিন্ন ভিন্ন হলেও তাদের মূল সুর একই। প্রস্তাবনাগুলোতে গর্ভপাতের বিষয়ে মেক্সিকোর আইন সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে।
মেক্সিকোতে গর্ভপাত নিয়ে চলছে দ্বৈত-শাসন। মেক্সিকো সিটি দেশটির ৩২টি প্রদেশের মধ্যে একমাত্র প্রদেশ যেখানে গর্ভধারণের ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত নারীরা আইনত বৈধভাবে এবং বিনামূল্যে গর্ভপাত করাতে পারেন। কিন্তু বাকি ৩১ প্রদেশে গর্ভপাতের জন্য চিকিৎসকের মূল্যায়ন প্রয়োজন হয়। গর্ভধারণ সংশ্লিষ্ট নারীর জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হলে বা বা সংশ্লিষ্ট নারী ধর্ষণের শিকার হলে চিকিৎসকরা গর্ভপাত করান। কিন্তু এসব প্রমাণ করা নারীদের জন্য খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
‘অবজারভেতোরিও ফেমিনিসতা ক্লারা জেতকিনের’ সদস্য সমাজ বিজ্ঞানী ফ্রানকিসকা দুয়ার্তে বলেছেন, মেক্সিকো প্রদেশে যা হয় তা অন্য প্রদেশের নারীদের ভাগ্যে জোটে না। এটা তাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করেছে। মেক্সিকো সিটি গভর্নমেন্টের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত দশ বছরে মেক্সিকোতে যত গর্ভপাত করানো হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ মেক্সিকো সিটির বাইরে থেকে গিয়েছিল।