আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে পৃথিবী এমন সভ্য, সুন্দর ছিল না। ছিল জাহিলিয়াতের তিমিরে ঢাকা। কারণ মানুষ তখন ভুলে গিয়েছিল নিজেদের পরিচয়। ভুলে গিয়েছিল তারা মানুষ। ফলে পশুত্বের চেয়েও নিকৃষ্ট হয়ে ওঠেছিল তাদের মনন। তারা এতোটাই অমানবিক ছিল, নিজের ঔরষজাত সন্তানকেও জীবন্ত মাটিতে পুঁতে দিতে হাত কাঁপতো না। মায়ার উদ্রেক হত না পাষাণ চিত্তে। হানাহানি, মারামারি, রক্তারক্তি, কাফেলা লুট, নারী নির্যাতনসহ এমন কোনো মন্দ কাজ নেই, যা তারা করতো না। এমনই এক অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়ে (৫৭০ খ্রিস্টাব্দ) এই বর্বরোচিত সমাজব্যবস্থাকে আমূল পরিবর্তনের জন্য আগমন হয় এক মহামানবের। মহানবীর। যাঁর নাম মুহাম্মাদ (সা.)
যিনি পরবর্তী সময়ে মহান আল্লাহ প্রদত্ত ঐশী মশালে তিমিরময় এই পৃথিবীকে আলোকিত করেন। মক্কার কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর পিতা ছিলেন আবদুল্লাহ। আর মাতা ছিলেন আমিনা। জন্মের পূর্বেই বাবাকে হারানো শিশু মুহাম্মাদ (সা.) মক্কার নিয়মানুযায়ী দুধ মা হালিমা সাদিয়ার ঘরে লালিত-পালিত হন কয়েক বছর। বুঝ হওয়ার পর মায়ের কাছে ফিরে আসেন। এর কয়েকদিন পর মা’ও ইন্তিকাল করেন। বাবা মা হারা শিশু মুহাম্মাদ বড় হতে থাকেন দাদা আব্দুল মুত্তালিব এবং চাচা আবু তালিবের আদরে। আশ্রয়ে। শৈশব কালেই তিনি সত্যবাদিতা আর সদাচরণে সবার প্রিয় হয়ে ওঠেন। আমানতদারীর বিশ্বস্ততায় উপাধি পান ‘আল-আমিন’ তথা বিশ্বাসীর।
সেই বর্বরতার যুগে যুবক মুহাম্মদ (সা.) চিন্তামগ্ন থাকতেন হেরা গুহায়। সেই চিন্তা ছিল মানবতার মুক্তির। কিভাবে এই বর্বরোচিত সমাজের পরিবর্তন হবে, মানুষ সত্যিকারের মানুষে পরিণত হবে এই ধ্যানেই মগ্ন থাকতেন দিন-রাত। অতঃপর একদিন ঐশী বাণী নিয়ে হাজির হলেন ফেরেশতা জিবরাঈল (আ.)
নবুয়তের দ্বায়িত্ব অর্পিত হল মানবতার মহাপুরুষ মুহাম্মাদ (সা.)-এর উপর। চল্লিশ বছর বয়সে হলেন নবী ও রাসূল। নবীজি ঐশী বাণীকে মানুষের কাছে তুলে ধরলেন। দ্বারে দ্বারে পৌঁছাতে গিয়ে আক্রান্ত হলেন বিভ্রান্ত মানুষগুলোর হাতে। আল্লাহর আদেশে ফেরেশতা এসে বললেন, ‘আদেশ করুন, দু’পাহাড় একত্র করে এদের পিষে ফেলি।’ কিন্তু না। নবীজি তা করলেন না। বরং বাধা দিয়ে বললেন, ‘এদের পরপ্রজন্ম হয়তো ইসলাম গ্রহণ করতে পারে।’ (সহীহ বুখারী : ৩২৩১)
নবীজির এই দয়া নারী, পুরুষ, শিশু, যুবক, বৃদ্ধ সব মানুষের জন্যই সমানভাবে নিবেদিত ছিল। হোক সে ভিন্ন মতের বা পথের। কিম্বা অন্য ধর্মের। রাসূল সা. এর পাশ দিয়ে একবার এক লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি তখন তা দেখে দাঁড়ালেন, উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম তখন বললেন, এ তো ইহুদির লাশ। রাসূল সা. তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, সে কি মানুষ নয়? (সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৩১২) নবীজি আমার এমনই এক ফুল, যে ফুলের খুশবোতে দুনিয়া মাতোয়ারা। এমনইভাবেই নবীজি পৃথিবীর ইথারে ইথারে মহাসত্যের আলো ছড়িয়ে গেছেন। রোপণ করেছেন মানবতার বীজ। দিয়ে গেছেন আল্লাহ প্রদত্ত সুন্দর একটি জীবনব্যবস্থা।