অনেক সময় একটি হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়। এরই ভিত্তিতে শরীয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ গানকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। যেমন বলা হয়, ঈদের গান শ্রবণ করা জায়েজ। দলিল হিসেবে এ হাদীসটি পেশ করা হয়।
হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত:একবার রাসূল সা. তাঁর ঘরে প্রবেশ করেন। তখন তার ঘরে দুই বালিকা দফ বাজাচ্ছিল। অন্য রেওয়ায়েতে আছে গান করছিল। আবু বকর রা. তাদের ধমক দেন। তখন রাসূল সা. বললেন: তাদের গাইতে দাও। কারণ প্রত্যেক জাতিরই ঈদের দিন আছে। আর আমাদের ঈদ হল আজকের দিন। (বুখারী)
অন্যভাবে বলা হয়, দফ বাজিয়ে বিয়ে প্রচারের জন্য গান গাওয়া আর তাতে মানুষদের উদ্ধুদ্ধ করা জায়েজ। দলিল: রাসূল সা. বলেছেন:হারাম ও হলালের মধ্যে পার্থক্য হল দফের বাজনা। এই শব্দে বুঝা যায় যে, সেখানে বিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। (আহমাদ)
এ সময় কথার উত্তর হলো, বুখারীতে বর্ণিত হাদীসে পরিস্কার বলা হয়েছে যারা বাজাচ্ছিল তারা নাবালেগ বালিকা ছিল। সেই সাথে আম্মাজান আয়শা রাঃ বলে দিয়েছেন, তারা কোন গায়িকা ছিল না। এমনিতেই বাজাচ্ছিল।
সুতরাং এটি দিয়ে কিভাবে বালেগ ব্যক্তিদের গান বাজনা ও দফের বাদ্যের অনুমোদন হতে পারে?
বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের অভিমত হল, উপরোক্ত বিধান হল পূর্বের। প্রথমত জাহেলী যুগের প্রথা হিসেবে দফ বাজানো হতো। এর অনুমোদনও প্রথম প্রথম দেয়া হয়েছিল। যেমন মদের অনুমোদন ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সর্বপ্রকার বাদ্য বাজনা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এমন কি দফের বাজনাও।
নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারা দফ নিষিদ্ধ হওয়া পরিস্কার প্রমাণিত হয়! হযরত আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দফ হারাম। বাদ্যযন্ত্র হারাম। মদের পেয়ালা হারাম। বাঁশী হারাম। [সুনানে সুগরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৩৩৫৯, সুনানে কুরবা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২১০০০]
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, শেষ জমানায় আমার উম্মত বানর ও শুকরে রূপান্তরিত হবে। জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! তারা সাক্ষি দিবে যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন মাবুদ নাই এবং আপনি আল্লাহর রাসূল এবং রোযা রাখার পরও?
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন, হ্যাঁ।বলা হল, তাদের অপরাধ কি? বললেন, তারা বাদ্য, গায়িকা এবং দফের বাজনা গ্রহণ করবে। মদ খাবে, রাতে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে ঘুমাবে। আর সকালে দেখবে তারা বানর ও শুকরে পরিণত হয়ে গেছে। [হিলয়াতুল আওলিয়া-৩/১১৯]
এসব বর্ণনা প্রমাণ করে দফ বাজানো সম্পূর্ণ হারাম। বাচ্চাদের দফ বাজানো সম্পর্কিত বর্ণনা পেশ করে এ হারাম বিষয় হালাল করার চেষ্টা করা ব্যর্থ চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।