দেশের গ্যাস সংকট মোকাবেলার জন্য শিগগিরই সাগরে গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করা হবে। বিশেষ করে সাগরের ১২ নম্বর ব্লকে বিপুল পরিমাণ তেল-গ্যাস মজুদ থাকার নমুনা পাওয়ায় বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে আগামী নভেম্বর থেকে দুই হাজার লাইন কিলোমিটার ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ করা হবে। খবর পেট্রোবাংলা সূত্রের।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৪ মার্চ দক্ষিণ কোরিয়ার একটি কোম্পানি দাইয়ু করপোরেশন-এর সঙ্গে সাগরের ১২ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) সই করে পেট্রোবাংলা। সমুদ্র উপকূল থেকে ব্লকটির দূরত্ব ১৮০ কিলোমিটার। ব্লকটির ওপর পানির গভীরতা গড়ে একহাজার ৭০০ মিটার। এই ব্লকের তিন হাজার ৫৬০ লাইন কিলোমিটার দ্বিমাত্রিক জরিপ করে সম্ভাবনাময় পাঁচটি লিড বা প্রোসপেক্ট পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিনটিকে বেশ সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখছে জ্বালানি বিভাগ।
সূত্র জানায়, দ্বিমাত্রিক (টু-ডি) ভূকম্পন যে জরিপ করা হয়েছে তাতে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি এলাকায় গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি সম্ভাবনা থাকলেই তাকে বাণিজ্যিক ভাবে লাভজনক বলে ধরা হয়। তবে এর চেয়ে ব্লক ১২-তে আরও বেশি সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দ্বিমাত্রিক জরিপের চেয়ে ত্রিমাত্রিক জরিপ আরও শক্তিশালী। এতে তেল-গ্যাসের পরিমাণ সম্পর্কে আরও নিশ্চিত ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সাগরে শুধুমাত্র সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস তোলা হয়েছে। এই গ্যাসক্ষেত্রটি ১৯৯৬ সালে আবিষ্কার করে ব্রিটিশ তেল-গ্যাস কোম্পানি কেয়ার্ন এনার্জি। ১৯৯৮ সালে সেখান থেকে গ্যাস উৎপাদন শুরু করে কোম্পানিটি। সাঙ্গু আনুষ্ঠানিক ভাবে পরিত্যক্ত হয় ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে। এরপর সাগরের আর কোনও ক্ষেত্রে তেল-গ্যাসের অনুসন্ধান করা হয়নি।
২০১২ সালের ১৪ মার্চ মিয়ানমারের কাছ থেকে বঙ্গোপসাগরের একলাখ ১১ হাজার ৬৩১ বর্গকিলোমিটার এবং ২০১৪ সালের ৮ জুলাই ভারতের কাছ থেকে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা পায় বাংলাদেশ। এরপর সব মিলিয়ে ব্লক পুনর্বিন্যাস করে ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয় গোটা সমুদ্রসীমাকে। কিন্তু এখন এর মধ্যে মাত্র তিনটি ব্লকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, কোরীয় কোম্পানি দাইয়ু ছাড়া বর্তমানে ভারতীয় কোম্পানি অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস করপোরেশন (ওএনজিসি) অগভীর সমুদ্রে ৪ ও ৯ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ করছে।
এ ব্যাপারে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এম তামিম আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ আরও আগেই নেয়া উচিৎ ছিল তাহলে আর এলএনজি আমদানি করে সংকট মোকাবেলা করতে হতো না। অবশিষ্ট ব্লকগুলোতেও দ্রুত অনুসন্ধান করা উচিৎ বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। #