ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের আগ পর্যন্ত আসামিদের আদালতে হাজিরা দেওয়ার নিয়ম তুলে দিতে নতুন আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেছে আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি।
কমিটি বলছে, এসব মামলায় আসামিদের বার বার হাজিরার নামে হয়রানির শিকার হতে হয়, যা ন্যায়বিচারের পরিপন্থি।
কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, বিষয়টি তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে।
রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
কমিটির সভাপতি আবদুল মতিন খসরু তাদের এই সুপারিশ দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, “ধরেন, একটা মামলায় ৬০-৭০ জন আসামি হল। দেখা যায়, এফআইআর দেওয়ার অনেক দিন পরে চার্জশিট দেওয়া হয়। এই সময়টায় যাদের আসামি করা হয়, তাদের কোর্টে নির্দিষ্ট সময় পর পর আদালতে হাজিরা দিতে হয়।
“দিস ইজ এবিউস অব দ্য প্রসিডিং অব কোর্ট, মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এমন হওয়া উচিত যে, একবার সারেন্ডার করে জামিনে যাবে, চার্জশিট দেওয়ার আগ পর্যন্ত ‘অন কল’ থাকবে। তাদের ওই এক মাস পর পর হাজিরা দিতে হবে না। এই লক্ষ্যে একটা আইন করার জন্য বলা হয়েছে।”
সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে কথা বলে মন্ত্রণালয়কে এই আইন করতে বলা হয়েছে বলে জানান সাবেক আইনমন্ত্রী মতিন খসরু।
সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেন, “চার্জশিট সাবমিশনের আগে লিগ্যাল প্রসিডিংস শুরু হয় না। এর আগে আসামির কোর্টে যাওয়া, না যাওয়ায় কিছু যায় আসে না।
“এই যে আসামিরা এক মাস পর পর কোর্টে যায়, উকিল-পেশকার থেকে শুরু করে আঠারো ঘাটে টাকা দিতে হয়। একটা পরিবার এমনিতেই ধ্বংস হয়ে যায়। ন্যায়বিচার পেতে এসে মানুষ হয়রানির শিকার হয়। বিচারের নামে বিচারপ্রার্থীরা অবিচারের শিকার হয়। এইটা বন্ধ করার জন্য সুপারিশ করেছি।”
বিষয়টি নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “হাজিরা দেওয়ার ব্যাপারে ফৌজদারি কার্যবিধিতে বলা আছে। তদন্তের সুবিধার্থে হাজিরা দেওয়ার ব্যাপারটি আছে। ওই জায়গাটা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। সংসদীয় কমিটি যে সুপারিশ করেছে সেই বিষয়টি আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখব।“
সংসদীয় কমিটি ফৌজদারি মামলাগুলো রাষ্ট্রপক্ষে পরিচালনাকারী পিপি ও এপিপিদের ভাতা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।
মতিন খসরু বলেন, “তাদের যে সম্মানী দেওয়া হয় তাতে ভালো আইনজীবী এ পদগুলোর জন্য পাওয়া যায় না। আইন মন্ত্রণালয় তাদের সম্মানী বাড়ানোর বিষয়ে পজিটিভ।”
বৈঠকে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য অবিলম্বে বিচার প্রক্রিয়া ঢেলে সাজানোর সুপারিশও করা হয়।
মতিন খসরুর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, মো. শামসুল হক টুকু, জিয়াউল হক মৃধা, সফুরা বেগম ও আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী অংশ নেন।